অনলাইনে সিটি ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম (অ্যাপ, ওয়েবসাইট)

সুপ্রিয় পাঠক বৃন্দ, আশা করি সকলে ভাল আছেন। আরো একটি নতুন অনুচ্ছেদ নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়ে গেলাম। আপনারা অনেকেই অনলাইনে সিটি ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম জানতে চেয়ে অনুসন্ধান করে থাকেন। আমার আজকের অনুচ্ছেদে অনলাইনে সিটি ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সহ যাবতীয় তথ্য উপস্থাপন করব। সিটি ব্যাংক একাউন্ট অনলাইনে খোলার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে আমার সম্পূর্ণ লেখাটি মনোযোগ সহকারে পাঠ করার আহবান রইল। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
সিটি ব্যাংক সুবিধা
সিটি ব্যাংক হল বাংলাদেশের একটি বেসরকারি ব্যাংক যা অন্যান্য ব্যাংকের মতোই নির্দিষ্ট সময় ও শর্ত অনুযায়ী গ্রাহক কে একটা নির্দিষ্ট ইন্টারেস্ট এর বিনিময় ঋণ প্রদান করে। এদিন থেকেই ব্যাংক মুনাফা লাভ করে। সিটি ব্যাংকে রিং করার ক্ষেত্রে গ্রাহকগণ কিছু সুবিধা পেয়ে থাকেন। সুবিধাগুলো হলো- ব্যাংক কর্তৃক লোন প্রদানের ক্ষেত্রে সবসময়ই দুটি পক্ষ ভূমিকা পালন করে। একটি হল ব্যাংক এবং অন্যটি হলো ঋণের আবেদনকারী। আবেদনকারীর আবেদনের ভিত্তিতেই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঋণ প্রদান করে থাকেন। সিটি ব্যাংকে ক্ষুদ্র মাঝারি কিংবা বড় যেকোনো ধরনের লোন মঞ্জুর করার সুবিধা রয়েছে। অর্থাৎ গ্রাহক তার ইচ্ছেমতো ক্ষুদ্র মাঝারি কিংবা বড় আকারের ঋণ গ্রহণ করতে পারবেন।
সিটি ব্যাংক গ্রাহককে ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বক্তব্যকেই গুরুত্ব প্রদান করে থাকে। ব্যাংকের সিদ্ধান্তই এক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচিত হয়। সিটি ব্যাংক সাধারণত নগদ অর্থ হিসেবে লোন দিয়ে থাকে। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে কাঁচামাল, যন্ত্রাংশ অন্যান্য জিনিসও কিনে দিয়ে থাকে। সিটি ব্যাংকের ইন্ডিয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহক চাইলে একেবারেই সম্পূর্ণ টাকা নিতে পারে কিংবা কিস্তি ভিত্তিতেও ঋণের টাকা গ্রহণ করতে পারেন। সিটি ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংকের মতই একটি নির্দিষ্ট জামানতের বিপরীতে ঋণ মঞ্জুর করে থাকে। তবে ক্ষুদ্র ঋণের ক্ষেত্রে কোন জামানত ছাড়াই ব্যক্তিগত গ্যারান্টিতে ঋণ দিয়ে থাকে।
সিটি ব্যাংক ঋণের টাকার উপর নির্ভর করে ইন্টারেস্ট এর হার নির্ধারণ করে থাকে। সিটি ব্যাংক লোনের ধরন গ্রাহকের অবস্থার এবং গ্রাহকের সাথে ব্যাংকের সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন মেয়াদে ঋণ প্রদান করে থাকে। সিটি ব্যাংকের ঋণ সাধারণত কিস্তিতে পরিশোধ করতে হয়। তবে ব্যাংকিং কোয়ার্টার অনুযায়ী তিন মাস অন্তর শুধু সুদ পরিশোধ করার সুবিধা সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছে।
সিটি ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট সুবিধা
সুবিধা জনক বেসরকারি ব্যাংক হলো সিটি ব্যাংক। আপনারা অনেকেই বিভিন্ন ব্যাংকে সেভিংস একাউন্ট খুলতে আগ্রহী। সিটি ব্যাংকে সেভিংস একাউন্ট খোলার কিছু সুবিধা রয়েছে। সুবিধাগুলো হল-সর্বনিম্ন ৫০০০ টাকায় একাউন্ট খোলা যায়। অর্ধ বার্ষিক হারে মুনাফা পাওয়া যায়। ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে যেকোনো সময় যে কোন জায়গা থেকে ট্রানজেকশন করার সুবিধা রয়েছে। সিটি কাজের মাধ্যমে ডিজিটাল ব্যাংকিং ফেসিলিটি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। সিটি ইসলামী সেভিং একাউন্ট একচুয়াল মুনাফা হার ১.৬৪ শতাংশ।
অনলাইনে সিটি ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম
সিটি ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য অফলাইন এবং অনলাইন দুই ধরনের সুবিধা রয়েছে। গ্রাহক চাইলে সরাসরি ব্যাংকে গিয়ে একাউন্ট খুলতে পারবেন। অথবা তিনি ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারবেন।
অফলাইন পদ্ধতি: সরাসরি ব্যাংকে গিয়ে একাউন্ট খোলার পদ্ধতিকেই অফলাইন পদ্ধতি বলা হয়ে থাকে। অফলাইনে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য যে সকল কাগজপত্র প্রয়োজন-
- এনআইডি বা জন্ম সনদ বা পাসপোর্ট যে কোন একটি আইডি কার্ড।
- দুই কপি সদ্য তোলা রঙিন ছবি। অর্থের উৎস নমিনির এক কপি রঙিন ছবি।
- নমিনির এনআইডি বা জন্ম সনদ বা পাসপোর্ট যেকোনো একটি।
- গ্রাহকের আয়ের উৎসের এক কপি ডকুমেন্ট।
- ই-টিআইএন (যদি থাকে)।
উপরোক্ত কাগজপত্র সমূহ নিয়ে নিকটস্থ সিটি ব্যাংকের যে কোন শাখায় গিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। ফার্মটি পূরণসাপেক্ষে প্রাইমারি ডিপোজিট সহ ব্যাংকে জমা দিতে হবে। অনলাইনে সিটি ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম: ডিজিটাল যুগে গ্রাহকগণ ঘরে বসেই যে কোন সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে থাকেন। সিটি ব্যাংক ঘরে বসেই একাউন্ট খোলার সুবিধা তৈরি করে দিয়েছে।
ঘরে বসেই অনলাইনে সিটি ব্যাংকের একাউন্ট খুলতে যা যা প্রয়োজন-
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্র।
- নমিনির ছবি।
- নমিনির জাতীয় পরিচয় পত্র।
উপরোক্ত কাগজপত্র সাথে নিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে একাউন্ট খোলার নিয়ম তুলে ধরা হলো-
- প্রথমে সিটি এখনই অ্যাকাউন্ট নামে অ্যাপ খুলতে হবে এবং নিজের জন্য অ্যাকাউন্ট করার ক্ষেত্রে open an individual account নির্বাচন করতে হবে।
- অতঃপর আপনার সম্ভাব্য মাসিক লেনদেন নির্বাচন করতে হবে।
- তারপর আপনার মোবাইল নম্বর দিয়ে সেখানে একটি ওটিপি পাবেন।
- ওটিপি প্রবেশ করিয়ে নেক্সট বাটনে চাপতে হবে।
- অতঃপর আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের সামনে এবং পিছনের এক কপি ছবি তুলতে বলা হবে।
- অতঃপর নিজের ছবি তুলতে বলা হবে। মনে রাখতে হবে ছবি তোলার সময় যাতে পর্যাপ্ত আলো থাকে।
- অতঃপর আপনার পেশা নির্বাচন করতে হবে।
- তারপর বর্তমান ঠিকানা নির্বাচন করতে হবে। অতঃপর আপনার নিয়মিত ব্যবহার করা ইমেইল একাউন্ট যোগ করতে বলা হবে।
- অতঃপর আপনার নমিনির নাম, বিবরণ, জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর, সম্পর্ক এবং তার একটি ছবি সংযুক্ত করতে হবে।
- সর্বশেষ আপনার একাউন্টের ধরন এবং নিকটস্থ শাখা নির্বাচন করতে হবে।
সবগুলো তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করা হয়ে গেলে শর্তাবলী বাক্সে টিক দিতে হবে। এভাবেই আপনার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়ে যাবে।
সিটি ব্যাংক একাউন্ট চার্জ
ব্যাংক পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কাস্টমারদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণে চার্জ করে থাকে। সিটি ব্যাংক কাস্টমার দের ক্ষেত্রে চার্জের পরিমাণ তুলে ধরা হলো-
- নিজস্ব এজেন্ট আউটলেট এর ক্ষেত্রে ব্যাংকে চার্জ সম্পূর্ণ ফ্রি।
- সিটি ব্যাংক এটিএম এর ক্ষেত্রে চার্জ একদম ফ্রি।
- অন্যান্য এজেন্ট আউটলেট বা সিটি ব্যাংক ব্রাঞ্চ হতে এবং ব্রাঞ্চ একাউন্ট হতে এজেন্ট আউলাটে চার্জ ০.২৫%।
- অর্থ স্থানান্তরের ক্ষেত্রে নিজস্ব আউটলেটের গ্রাহকের মধ্যে সম্পূর্ণ ফ্রি।
- অন্য এজেন্ট একাউন্ট বা সিটি ব্যাংকের অন্য ব্রাঞ্চ বা অন্য ব্যাংকে এর গ্রাহকের মধ্যে চার্জ ০.২৫%।
- এছাড়া অ্যাকাউন্ট মেনটেনেন্স এর ক্ষেত্রে সঞ্চয়ী হিসাব এবং নবজাতক হিসেবে ক্ষেত্রে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত সম্পূর্ণ ফ্রিতে, ২৫ হাজার পর্যন্ত ১০০ টাকা হারে, ২৫ হাজার টাকার উপরে হলে ৩০০ টাকা হিসেবে চার্জ করা হয়ে থাকে। তবে বেসিক সেভিংস বা গার্মেন্টস শ্রমিক বার ছাত্র-ছাত্রীদের হিসাবে কোন মেন্টেনেন্স চার্জ প্রয়োজন নেই।
উল্লেখ যে; উপরোল্লেখিত চার্জ সমূহের সাথে ভ্যাট প্রযোজ্য রয়েছে।
সিটি ব্যাংক একাউন্ট চেক করার নিয়ম
আপনারা অনেকেই সিটি ব্যাংকে সেভিংস কিংবা অন্য অ্যাকাউন্ট খুলে থাকেন। সেক্ষেত্রে আপনার ব্যালেন্সের পরিমাণ ঘরে বসেই চেক করার সুবিধা সিটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রদান করে থাকে। আপনি অনলাইনেই খুব সহজে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স চেক করতে পারবেন। এজন্য আপনাকে যা যা করতে হবে-
- আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজারে এই লিঙ্কে প্রবেশ করতে হবে। সেখানে আপনার একাউন্টে সাইন ইন করুন বাটনে ক্লিক করতে হবে।
- তালিকা থেকে ব্যাংকিং নির্বাচন করে নিতে হবে।
- পৃষ্ঠার মাঝখানে অনলাইন অ্যাক্সেস সেটআপ করে নিতে হবে।
- আপনার সিটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর সহ এটিএম কার্ড নম্বর এবং পিন নম্বর লিখে “চালিয়ে যান” বাটনে ক্লিক করতে হবে।
- অনলাইন মেকিং ব্যবহার করার জন্য ব্যবহারকারীর নাম এবং পাসওয়ার্ড নির্বাচন করতে হবে। মনে রাখতে হবে পাসওয়ার্ড যাতে কোনভাবেই সহজ ও সাবলীল না হয় এবং আপনার ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা না থাকে।
- অতঃপর হোমপেজে ফিরে গিয়ে “আপনার একাউন্টে সাইন ইন করুন” বাট অনেক ক্লিক করতে হবে।
- তালিকা থেকে “ব্যাংকিং” নির্বাচন করতে হবে।
- সেখানে ব্যবহারকারীর নাম এবং পাসওয়ার্ড লিখে সাইন ইন করলে খুব সহজেই আপনি আপনার ব্যালেন্স এবং সাম্প্রতিক লেনদেন সম্পর্কিত তথ্য দেখতে পারবেন।
উপসংহার: ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কিংবা সুবিধার ক্ষেত্রে মানুষ ব্যাংক একাউন্টে টাকা লেনদেন করে থাকেন। এজন্য ব্যাংক একাউন্ট খোলার প্রয়োজন হয়ে থাকে। বেসরকারি ব্যাংক হিসেবে সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য দারুন কিছু সুযোগ সুবিধা প্রদান করে থাকে। সিটি ব্যাংকে কিভাবে একাউন্ট খোলা যায় তা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য আমার অনুচ্ছেদে উপস্থাপন করলাম। আশা করি আমার অনুচ্ছেদ থেকে অনলাইনে সিটি ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে অবহিত হতে পেরেছেন। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।