একুশে ফেব্রুয়ারির কবিতা, একুশে ফেব্রুয়ারির কবিতা আবৃত্তি

সম্মানিত পাঠক, আজকের এই অনুচ্ছেদে আমরা একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে একুশে ফেব্রুয়ারির কবিতা, একুশে ফেব্রুয়ারির কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় যে ধরনের কবিতা আবৃত্তি করা যেতে পারে সে সকল কবিতার একটু ধারণা আপনাদের দেব। সেই সাথে আমরা এই অনুচ্ছেদে একুশে ফেব্রুয়ারি কবিতা আবৃত্ত ির প্রতিযোগিতার জন্য কিছু কবিতা সংরক্ষণ করেছি। সে সকল কবিতা আমার এই অনুচ্ছেদ হতে আপনি সংগ্রহ করতে পারবেন। তাই আপনারা যারা একুশে ফেব্রুয়ারি কবিতা অনুসন্ধান করে আমার এই অনুচ্ছেদে এসেছেন তাদের সকলকে স্বাগতম।
একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। একুশে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস বলা হয়ে থাকে। প্রতিবছর যথাযথ ভাব গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে শহীদের স্মরণ করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বা একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করা হয়ে থাকে। একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন উপলক্ষে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আলোচনা সভার পাশাপাশি চিত্রাংকন ও কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে থাকে। আপনি যদি একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে চান তাহলে আমার এই অনুচ্ছেদ হতে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের কবিতা সংগ্রহ করতে পারবেন। আমরা আপনাদের জন্যই কিছু ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের কিছু ছোট ছোট কবিতা শেয়ার করেছি।
একুশে ফেব্রুয়ারির কবিতা
একুশে ফেব্রুয়ারি হল জাতীয় শোক দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস একসঙ্গে। এই দিনটি পূর্ণ বিশ্বে অনুষ্ঠিত হয় মাতৃভাষার গুরুত্ব ও মূল্যায়ন করে এবং মানুষের ভাষার সম্পর্কে জ্ঞান ও সচেতনতা বৃদ্ধি করে।এই দিনটি একটি সম্মেলন হিসেবে পরিচালিত হয় এবং বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন কর্মসূচি ও অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন স্কুল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলা ভাষা ও সাংস্কৃতিক পরিচয় উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতিবছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করা হয়।একুশে ফেব্রুয়ারি একটি গৌরবময় দিন, যা মানবজাতির মূল অধিকার এবং বৈশিষ্ট্য হল ভাষা ও সাংস্কৃতিক পরিচয়। এই দিনটি আমরা মানবতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে মনে রাখতে পারি।
একুশের কবিতা – আল মাহমুদ
ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ
দুপুর বেলার অক্ত
বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি কোথায় ?
বরকতের রক্ত।
হাজার যুগের সূর্যতাপে
জ্বলবে এমন লাল যে,
সেই লোহিতেই লাল হয়েছে
কৃষ্ণচূড়ার ডাল যে !
প্রভাতফেরীর মিছিল যাবে
ছড়াও ফুলের বন্যা
বিষাদগীতি গাইছে পথে
তিতুমীরের কন্যা।
চিনতে না কি সোনার ছেলে
ক্ষুদিরামকে চিনতে ?
রুদ্ধশ্বাসে প্রাণ দিলো যে
মুক্ত বাতাস কিনতে ?
পাহাড়তলীর মরণ চূড়ায়
ঝাঁপ দিল যে অগ্নি,
ফেব্রুয়ারির শোকের বসন
পরলো তারই ভগ্নী।
প্রভাতফেরী, প্রভাতফেরী
আমায় নেবে সঙ্গে,
বাংলা আমার বচন, আমি
জন্মেছি এই বঙ্গে।
বাঙলা ভাষা – হুমায়ুন আজাদ
শেকলে বাঁধা শ্যামল রূপসী, তুমি-আমি, দুর্বিনীত দাসদাসী-
একই শেকলে বাঁধা প’ড়ে আছি শতাব্দীর পর শতাব্দী।
আমাদের ঘিরে শাঁইশাঁই চাবুকের শব্দ, স্তরে স্তরে শেকলের ঝংকার।
তুমি আর আমি সে-গোত্রের যারা চিরদিন উৎপীড়নের মধ্যে গান গায়-
হাহাকার রূপান্তরিত হয় সঙ্গীতে-শোভায়।
লকলকে চাবুকের আক্রোশ আর অজগরের মতো অন্ধ শেকলের
মুখোমুখি আমরা তুলে ধরি আমাদের উদ্ধত দর্পিত সৌন্দর্য:
আদিম ঝরনার মতো অজস্র ধারায় ফিনকি দেয়া টকটকে লাল রক্ত,
চাবুকের থাবায় সুর্যের টুকরোর মতো ছেঁড়া মাংস
আর আকাশের দিকে হাতুড়ির মতো উদ্যত মুষ্টি।
শাঁইশাঁই চাবুকে আমার মিশ্র মাংসপেশি পাথরের চেয়ে শক্ত হয়ে ওঠে
তুমি হয়ে ওঠো তপ্ত কাঞ্চনের চেয়েও সুন্দর।
সভ্যতার সমস্ত শিল্পকলার চেয়ে রহস্যময় তোমার দু-চোখ
যেখানে তাকাও সেখানেই ফুটে ওঠে কুমুদকহ্লার
হরিণের দ্রুত ধাবমান গতির চেয়ে সুন্দর ওই ভ্রূযুগল
তোমার পিঠে চাবুকের দাগ চুনির জড়োয়ার চেয়েও দামি আর রঙিন
তোমার দুই স্তন ঘিরে ঘাতকের কামড়ের দাগ মুক্তোমালার চেয়েও ঝলোমলো
তোমার ‘অ, আ’ –চিৎকার সমস্ত আর্যশ্লোকের চেয়েও পবিত্র অজর
তোমার দীর্ঘশ্বাসের নাম চন্ডীদাস
শতাব্দী কাঁপানো উল্লাসের নাম মধুসূদন
তোমার থরোথরো প্রেমের নাম রবীন্দ্রনাথ
বিজন অশ্রুবিন্দুর নাম জীবনানন্দ
তোমার বিদ্রোহের নাম নজরুল ইসলাম
শাঁইশাঁই চাবুকের আক্রোশে যখন তুমি আর আমি
আকাশের দিকে ছুঁড়ি আমাদের উদ্ধত সুন্দর বাহু, রক্তাক্ত আঙুল,
তখনি সৃষ্টি হয় নাচের নতুন মুদ্রা;
ফিনকি দেয়া লাল রক্ত সমস্ত শরীরে মেখে যখন আমরা গড়িয়ে পড়ি
ধূসর মাটিতে এবং আবার দাঁড়াই পৃথিবীর সমস্ত চাবুকের মুখোমুখি,
তখনি জন্ম নেয় অভাবিত সৌন্দর্যমন্ডিত বিশুদ্ধ নাচ;
এবং যখন শেকলের পর শেকল চুরমার ক’রে ঝনঝন ক’রে বেজে উঠি
আমরা দুজন, তখনি প্রথম জন্মে গভীর-ব্যাপক-শিল্পসম্মত ঐকতান-
আমাদের আদিগন্ত আর্তনাদ বিশশতকের দ্বিতীয়ার্ধের
একমাত্র গান।
একুশে ফেব্রুয়ারির কবিতা আবৃত্তি
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পৃথিবীর সকল দেশের পালন করা হয়ে থাকে। পৃথিবীতে একমাত্র দেশ বাংলাদেশ যেটি হলো ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে। তাই ১৯৯০ সালে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আমরা এই অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে কিছু কবিতা আপনাদের জন্য শেয়ার করলাম।
অমর একুশ নিয়ে কবিতা
ও মা তোর মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়
ওই হায়ানার দল ।
আমার চৌদ্দ পুরুষ বাপ-দাদাদের আঁখড়ে ধরা
আপন বুলি কেমনে ভুলি বল ?
জারি –সারি-ভাটিয়ালী –নকশি কাঁথার গান
এসব আমার বাংলা ভাষার অমূল্য উপাদান।
মাগো ওরা কয়, উর্দু হইব দুই বাংলার কথা,
সয়নায় তোর সন্তানেরা এ অন্যায়ের ব্যাথা ।
ছাত্র-শিক্ষক,স্রমিক-মজুর উঠেছিল ফেঁপে
সারা বাংলা আন্দোলনে উঠেছিল কেঁপে ।
একতার মুঠো হাত – বিক্ষোভের স্বর
আকাশে –বাতাসে তোলে প্রতিবাদের ঝড় ।
জয় বাংলা, বাংলার জয়-
হবে হবে হবে –হবে নিশ্চয়
কোটি বাঙ্গালী একসাথে , জেগেছে অরুনপ্রাতে
মায়ের ভাষা রবে সুরক্ষিত –অক্ষয় ।
রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই,রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই
সকলের প্রানে বাজে এক সুরের সানাই ।
থামবে না প্রতিবাদ চলবে লড়াই
ছাড়বনা নিজ মায়ের বুলি –মরে হবো ছাই ।
বজ্র মুষ্টি,জোর প্রতিবাদ চলে বারংবার
পাক পুলিশের গুলিতে মিছিলে উঠে হাহাকার,
লুটে পড়ে সালাম,বরকত,রফিক,জব্বার।
দিনটি ২১, মাস ফেব্রুয়ারী
আমার ভাইয়ের রক্ত মাখা শার্ট ভুলতে কি পারি ?
নাম নাজানা কত ভাষা শহীদ গন
ছিনিয়ে এনেছিল মাগো তোর চির আসন ।
বিশ্বের দরবারে আজ কত সম্মান,
মায়ের তরে রেখে গেলো যারা অবদান
তাদের জানাই সস্রদ্ধ কোটি কোটি সালাম।
বাংলা ভাষার জন্য যারা দিয়েছে প্রাণ
শহীদ হয়েছে তারা, অক্ষয় অমর অম্লান,
ভুলিনি আজো, তাদের রক্ত বৃথা যায়নি
স্মরণে তব শহীদ মিনার গড়েছি জানি।
বায়ান্ন সালের একুশের এমন এক দিনে
সালাম রফিক জব্বার আর কত কত জনে
মায়ের কোলে শহীদ হয়েছে ভাষার কারণে।
বিল ঝিল হাওড় নদী কলকল তানে
আমারে বাংলা ভাষায় সুখে দুঃখে ডাকে।
পাখির গানে ভোরের শিশিরে আকাশের চাঁদ
রাতের জোনাকী ফুল ফল, খুশি মানেনা বাধ
মায়ের হাসি সবুজ শ্যামলে ফসলের মাঠ
এইতো আমারই বাংলা ভাষার প্রথম পাঠ।
ভালবাসি বাংলা আর ভালবাসি ভাষা
রাষ্ট্র ভাষা বাংলা ভাষা, মায়েরই ভাষা ।
শোন বিশ্ব, নাই এমন ইতিহাস আর নাই
কোন কালে বাংলা ভাষার নাই মৃত্যু নাই।