টিবি রোগ কি কারনে হয়

পৃথিবীতে মহামারী আকারে টিভি রোগের বিস্তার লাভ করে ।এই রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় এক কোটি মানুষ এবং মারা যায় ১৫ লাখ মানুষ। সারাবিশে ২০১৮ সালে এ রোগী আক্রান্ত হয়। যক্ষা টিউবারকিউলোসিস বা টিবি একটি সংক্রামক জনিত রোগ যা মাইক্রো ব্যাকটেরিয়াম টিউবরকিউলোসিস নামক জীবাণু থেকে হয়। যক্ষা শব্দের অর্থ হচ্ছে” রাজক্ষয়”। যক্ষা হলে কোন অঙ্গহানি হয় না তবে হৃদপিণ্ড ও থাইরয়েড গ্রন্থিতে যক্ষা হতে পারে। বর্তমান বিশ্বে যক্ষা রোগের টিকা বা ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে যার কারণেই আজ বিশ্ব এই মহামারি হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।
টিবি রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ
টিভি রোগের লক্ষণ হচ্ছে জ্বর এবং কাশি ফুসফুসে যক্ষা হলে প্রচুর জ্বর এবং কাশি হতে পারে। কাশির সাথে থুতুতে রক্ত আসতে পারে। পাঁচ থেকে ছয় মাস জ্বর এবং তিন সপ্তাহেরও বেশি কাশি হলে এই রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। কাশির সাথে কফ এবং কফের সাথে মাঝে মাঝে রক্ত ঝরতে পারে শরীরের রক্ত কমে যায় বুকে ব্যথা দুর্বলতা এবং ক্ষুধামন্দা টিভি রোগের উপসর্গ। থুতু বাকফের মাধ্যমে এই রোগ বাতাসে সংক্রমিত হতে পারে। যাদের শরীরের ওপরে ক্ষমতা কম খুব সহজেই তারা যক্ষা রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
টিবি রোগ কি কারনে হয়
মাইক্রো ব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস নামক জীবাণু আক্রান্তের কারণে টিবি বা যথা নামক ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত হয়।এই রোগ শরীর ফুসফুসে হৃৎপিণ্ডে ও থাইরয়েড গ্রন্থিতে আক্রান্ত হতে পারে। তবে যক্ষা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় ফুসফুসে।
টিবি রোগের লক্ষণ গুলো কি কি
ফুসফুসে কাশি দীর্ঘ সময় হলে এবং এই কাশির সাথে কফ ও কফের সাথে রক্ত বের হলে যক্ষা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। যক্ষা রোগের লক্ষণ হল।
- তিন সপ্তাহের বেশি কাশি ও জ্বর
- কাশির সাথে মাঝে মাঝে রক্ত ঝরে
- শরীরের ওজন কমে যাবে
- বুকে ব্যথা দুর্বলতা এবং ক্ষুধামন্দা অনুভব হয়।
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমলে এই রোগে আক্রান্ত হয়।
টিবি রোগ কি ছোয়াছে
টিবি আক্রান্ত ব্যক্তিকে ছুলে এই রোগ হয় না। যক্ষা রোগের সংক্রমণ ঘটায় বাতাসের মাধ্যমে। যক্ষা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশি বাতাসে মিশে বাতাসের মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটায়।
টিবি রোগের টেস্ট
টিভি রোগের পরীক্ষা সাধারণত কফপরীক্ষা করা হয়। বুকে এক্সরে অথবা সিটি স্ক্যান এবং শরীরের ত্বকের রক্ত পরীক্ষা করে যক্ষা রোগ কে সনাক্ত করা হয়। আক্রান্ত ব্যক্তিকে প্রথমে কফ পরীক্ষা তারপরে রক্ত পরীক্ষা এবং তার বুকের এক্সরে করলে ই সেই যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যাবে।
টিবি রোগ সারানোর উপায়
টিভি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে কফ কাশি এবং জ্বর থাকলে ব্যক্তিকে কফ পরীক্ষা ও তার রক্ত পরীক্ষা করে যদি যক্ষা রোগ শনাক্ত হয় তাহলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিকটস্থ কমিউনিটি হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি চালাতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির যক্ষা রোগের ধরন অনুযায়ী তার চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী করা হয়। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জেলা উপজেলা ও ইউনিয়নগুলোতে কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে এই সকল কমিউনিটি ক্লিনিকে বিনামূল্যে এবং যত্ন সহকারে দীর্ঘদিন যাবত যক্ষা রোগের চিকিৎসা করে আসছে। যক্ষা রোগের নিরাময়ের জন্য ডাক্তার ৬ থেকে ৯ মাস মেয়াদী এন্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন করায়। দীর্ঘদিন এন্টিবায়োটিক ওষুধ সেবনে এই রোগ ভালো হয়। নিয়মত এই ওষুধের কোর্স সম্পন্ন করে এই রোগের চিকিৎসা করা হয়। বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে জন্মের পর প্রত্যেক শিশুকে বিসিজি টিকা দেওয়া হয়। বাংলাদেশ যক্ষা রোগের চিকিৎসায় অনেক এগিয়ে। যক্ষা রোগের পর্যাপ্ত চিকিৎসা গ্রহণ না করলে এই অসুখ মানুষের জীবন নিয়ে নিতে পারে। তাই সচেতনতার সাথে এই রোগের চিকিৎসা করতে হবে
টিবি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা
বাড়ির নিকটস্থ কমিউনিটি সেন্টারগুলো থেকে যক্ষা রোগের চিকিৎসা দিয়ে আসছে। যক্ষা রোগের চিকিৎসায় দুই ধরনের ক্যাটাগরিতে ওষুধ সেবন করা হয় ছয় মাস এবং আট মাস মেয়াদী। ওষুধ নিয়মিত সেবন করতে হবে। এই ওষুধ বিনামূল্যে বাংলাদেশ সরকার প্রদান করে।
টিবি রোগের ঔষধ খাওয়ার নিয়ম
বাংলাদেশ সরকার টিবি বা যক্ষা রোগের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। যক্ষা রোগের চিকিৎসায় দুই ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। নিয়মিত ফুলকোস এন্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন করলে এই রোগ ভালো হয়। এ রোগের ওষুধ সেবন দুই পদ্ধতিতে করা হয় ছয় মাস মেয়াদী এবং আট মাস মেয়াদী। কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে স্বাস্থ্য সেবিকারা নিয়মিত এই ওষুধ সেবনের জন্য অসুস্থ রোগীর বাড়িতে ওষুধ সরবরাহ করে।
টিবি রোগের ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
নিয়মিত যক্ষা রোগের ওষুধ সেবন করতে হবে। এ রোগের ওষুধ দীর্ঘদিন এবং নিয়মিত সেবন করলে এই রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। মরণব্যাধি এই রোগ থেকে উপায়ের একমাত্র ওষুধ হলো অ্যান্টিবায়োটিক নিয়মিত সেবন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ সেবন করলে এই রোগ ভালো হয়। কিন্তু আপনি যদি নিয়মিত এই ওষুধ সেবন না করেন তাহলে এই ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আপনার এই রোগটা ভালো হবেই না সাথে আপনি আরো জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তাই এই ওষুধ নিয়মিত সেবন করুন।