দিবস

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস নিয়ে কবিতা

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের নিয়ে কবিতা শেয়ার করব। আপনারা যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসকে আরো ব্যাপকভাবে উদযাপন করতে চান তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি। আমরা এই আর্টিকেলে অত্যন্ত সুন্দর সুন্দর কিছু স্বাধীনতা দিবসের কবিতা শেয়ার করেছি। আশা করি আমার এই অনুচ্ছেদের স্বাধীনতা দিবসের কবিতা গুলো আপনাদের অনেক পছন্দ হবে। কারণ আমরা এই অনুচ্ছেদে যে সকল স্বাধীনতা দিবসের কবিতা শেয়ার করেছি আপনি আর অন্য কোন ওয়েবসাইট হাতে এই সকল কবিতা সংগ্রহ করতে পারবেন না। তাই আপনার পছন্দের সকল কবিতা একসাথে সংগ্রহ করার জন্য আমার এই অনুচ্ছেদটি অন্যান্য যে কোন অনুচ্ছেদ থেকে সবথেকে আলাদা হতে চলেছে। আশা করি আমার এই অনুচ্ছেদের কবিতা গুলো আপনাদের অনেক পছন্দ হবে এবং আপনি এই ওয়েবসাইট থেকে অনায়াসে সংগ্রহ করতে পারবেন।

স্বাধীনতা দিবসের কবিতা আবৃত্তি

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস প্রতি বছর ২৬শে মার্চ পালিত হয়। এই দিনটি 1971 সালে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার বার্ষিকী চিহ্নিত করে, যার ফলে স্বাধীনতার জন্য নয় মাসব্যাপী যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। দিনটি বাংলাদেশে একটি জাতীয় ছুটির দিন হিসাবে পালন করা হয় এবং সারা দেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং উদযাপন দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।

এ লাশ আমরা রাখবো কোথায়

হুমায়ুন আজাদ

Related Articles

এ লাশ আমরা রাখবো কোথায় ?

তেমন যোগ্য সমাধি কই ?

মৃত্তিকা বলো, পর্বত বলো

অথবা সুনীল-সাগর-জল-

সব কিছু ছেঁদো, তুচ্ছ শুধুই !

তাইতো রাখি না এ লাশ আজ

মাটিতে পাহাড়ে কিম্বা সাগরে,

হৃদয়ে হৃদয়ে দিয়েছি ঠাঁই।

শহীদদের প্রতি

__আসাদ চৌধুরী

তোমাদের যা বলার ছিল

বলছে কি তা বাংলাদেশ ?

শেষ কথাটি সুখের ছিল ?

ঘৃণার ছিল ?

নাকি ক্রোধের,

প্রতিশোধের,

কোনটা ছিল ?

নাকি কোনো সুখের

নাকি মনে তৃপ্তি ছিল

এই যাওয়াটাই সুখের।

তোমরা গেলে, বাতাস যেমন যায়

গভীর নদী যেমন বাঁকা

স্রোতটিকে লুকায়

যেমন পাখির ডানার ঝলক

গগনে মিলায়।

সাঁঝে যখন কোকিল ডাকে

কারনিসে কি ধুসর শাখে

বারুদেরই গন্ধস্মৃতি

ভুবন ফেলে ছেয়ে

ফুলের গন্ধ পরাজিত

স্লোগান আসে ধেয়ে।

তোমার যা বলার ছিল

বলছে কি তা বাংলাদেশ ?

ছাব্বিশে মার্চ

– স্বপন শর্মা

সংগ্রামী চেতনায় বিজয়ের উল্লাস;
হাসি গান আর আবেগের প্রকাশ।
জন্ম অধিকার বাঙ্গালী
বিশ্ব মাঝে বাংলা জাতীয় ইতিহাস;
যার নেপথ্য নায়ক –
মহান ছাব্বিশে মার্চ।

মায়ের অপত্য স্নেহ
বোনের হৃদয় নিংরানো ভালোবাসা
ঐক্য, সম্প্রীতি, সদ্ভাব-
ছাব্বিশেই যার উদ্ভব।

মুক্তির আত্নপ্রতয়ে ভাঙ্গল যারা শিকল
আনল যারা স্বাধীনতা
আমরা তাদের ভুলিনী
এবং ভুলব না।

অনেক চড়াই উৎরাই পেরিইয়ে
আর বলার অপেক্ষায় থাকে না
আমরা আজ স্বাধীন।

আমরা আজ স্বাধীন সংগ্রামী চেতনায়
বিজয়ের উল্লাস থাকবে মোদের
আনন্দ হাসি গান আর জাতীয় চেতনায়।

কেউ ছুটবে ফুলের তোড়া নিয়ে
কেউ ফেস্টুন হাতে-
রঙ্গীন আভা নিয়ে উদিত হয় সূয্য টা
পূর্ব আকাশে।

সে কোন আগ্রহ আর ব্যাকুলতা।
অনেকে হয়ত আজ জানোনা
কেন ফিরে আসে এই দিন?

এখনো সেই সব বাঙ্গালী রাজাকার
ক্ষুদিতের খানা গ্রাসে-
রনরোষ নিয়ে আসতে চায়;
এই দিনে আজ প্রতিবাদ হোক তার
আমাদের এই স্বাধীন বাংলায়।

স্বাধীনতা দিবস, তুমি

– মুহম্মদ কবীর সরকার(Mahdi Kaabir)

স্বাধীনতা দিবস,তুমিই স্বাধীন
আজ কেহ নেই তোমার অধীন।
বদলে গেছে ৭১আর আজকের দিন।
যে যার রাজত্বের রাণী
স্বাধীনতা দিবস তুমি
চৌয়াল্লিশ বছর পূর্বে তোমাকে
এনেছিলাম বুকের রক্ত দিয়ে লিখে।
জায়গা দিয়েছিলাম এই বুকে।
শত প্রাণ শত আঘাত ভুলে,
তোমার ঘরেও যে পরাধীনতা
মারামারি প্রাণ হীন নাশকতা
ওগো মোর প্রিয় স্বাধীনতা।
তবে তুমি কেন আসলে?
স্বাধীনতা দিবস তুমি
তোমার লগনে ও কাঁপছে ভূমি
তুমি যে এসেছ ভুলে যায় আমি।

এই দিনে বাংলাদেশের মানুষ জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে এবং জাতীয় সঙ্গীত গায়, “আমার সোনার বাংলা”। রাজনৈতিক নেতাদের বক্তৃতা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমেও দিবসটি চিহ্নিত করা হয়। প্রধান অনুষ্ঠানটি ঢাকার জাতীয় শহীদ স্মৃতিসৌধে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা যুদ্ধের বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

স্বাধীনতা দিবস নিয়ে বিখ্যাত কিছু কবিতা

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস বাংলাদেশের জনগণের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন, কারণ এটি তাদের স্বাধীনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের সংগ্রামের প্রতিনিধিত্ব করে। এটি এমন একটি দিন যা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা লোকদের ত্যাগ স্বীকার করার এবং স্থিতিস্থাপকতা ও সংকল্পের চেতনাকে উদযাপন করার যা দেশ সৃষ্টির দিকে পরিচালিত করেছিল।

স্বাধীনতা তুমি

– শামসুর রাহমান

স্বাধীনতা তুমি
রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।
স্বাধীনতা তুমি
কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো
মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা-
স্বাধীনতা তুমি
শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা
স্বাধীনতা তুমি
পতাকা-শোভিত শ্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল।
স্বাধীনতা তুমি
ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি।
স্বাধীনতা তুমি
রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার।
স্বাধীনতা তুমি
মজুর যুবার রোদে ঝলসিত দক্ষ বাহুর গ্রন্থিল পেশী।
স্বাধীনতা তুমি
অন্ধকারের খাঁ খাঁ সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক।
স্বাধীনতা তুমি
বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর
শানিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ।
স্বাধীনতা তুমি
চা-খানায় আর মাঠে-ময়দানে ঝোড়ো সংলাপ।
স্বাধীনতা তুমি
কালবোশেখীর দিগন্তজোড়া মত্ত ঝাপটা।
স্বাধীনতা তুমি
শ্রাবণে অকূল মেঘনার বুক
স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন।
স্বাধীনতা তুমি
উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির কাঁপন।
স্বাধীনতা তুমি
বোনের হাতের নম্র পাতায় মেহেদীর রঙ।
স্বাধীনতা তুমি বন্ধুর হাতে তারার মতন জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোস্টার।
স্বাধীনতা তুমি
গৃহিণীর ঘন খোলা কালো চুল,
হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো উদ্দাম।
স্বাধীনতা তুমি
খোকার গায়ের রঙিন কোর্তা,
খুকীর অমন তুলতুলে গালে
রৌদ্রের খেলা।
স্বাধীনতা তুমি
বাগানের ঘর, কোকিলের গান,
বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা,
যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।

স্বাধীনতা কবিতা কাজী নজরুল ইসলাম

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পথটি ছিল দীর্ঘ ও কঠিন, রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা দ্বারা চিহ্নিত। বাংলাদেশ পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিত ছিল, একটি অঞ্চল পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ভারতীয় ভূখণ্ডের 1,000 মাইলেরও বেশি দ্বারা বিচ্ছিন্ন। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ভৌগোলিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে আলাদা হওয়া সত্ত্বেও, এই অঞ্চলটি ইসলামাবাদে অবস্থিত একটি কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা শাসিত ছিল। এর ফলে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে উপেক্ষা ও প্রান্তিকতার অনুভূতি সৃষ্টি হয়।

বিদ্রোহী

– কাজী নজরুল ইসলাম

বল বীর-

বল উন্নত মম শির!

শির নেহারি আমারি,

নত-শির ওই শিখর হিমাদ্রীর!

বল বীর –

বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি’

চন্দ্র সূর্য্য গ্রহ তারা ছাড়ি’

ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া,

খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া

উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ব-বিধাত্রীর!

মম ললাটে রুদ্র-ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!

বল বীর –

আমি চির-উন্নত শির!

আমি চিরদুর্দ্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস,

মহা-প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস,

আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর!

আমি দুর্ব্বার,

আমি ভেঙে করি সব চুরমার!

আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল,

আমি দ’লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃংখল!

আমি মানি নাকো কোনো আইন,

আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম,

ভাসমান মাইন!

আমি ধূর্জ্জটী, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-বৈশাখীর!

আমি বিদ্রোহী আমি বিদ্রোহী-সূত বিশ্ব-বিধাত্রীর!

বল বীর –

চির উন্নত মম শির!

আমি ঝঞ্ঝা, আমি ঘূর্ণী,

আমি পথ-সম্মুখে যাহা পাই যাই চূর্ণী!

আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ,

আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ।

আমি হাম্বীর, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল,

আমি চল-চঞ্চল, ঠুমকি’ ছমকি’

পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’

ফিং দিয়া দিই তিন দোল্!

আমি চপলা-চপল হিন্দোল!

1970 সালে, আওয়ামী লীগ, পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী একটি রাজনৈতিক দল, জাতীয় নির্বাচনে বিপুল বিজয় লাভ করে। যাইহোক, তৎকালীন ক্ষমতায় থাকা সামরিক জান্তা ফলাফলকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে এবং আওয়ামী লীগ ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন শুরু করে। এটি ব্যাপক বিক্ষোভ এবং নাগরিক অস্থিরতার দিকে পরিচালিত করে, যা শেষ পর্যন্ত 26 মার্চ, 1971 সালে স্বাধীনতার ঘোষণায় পরিণত হয়।

26 শে মার্চের স্বাধীনতার কবিতা

স্বাধীনতার জন্য পরবর্তী নয় মাসব্যাপী যুদ্ধটি পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী এবং বাঙালি গেরিলা যোদ্ধাদের মধ্যে তীব্র লড়াইয়ের পাশাপাশি বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে ব্যাপক নৃশংসতা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর আত্মসমর্পণ এবং একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।

অস্ত্র সমর্পণ

-হেলাল হাফিজ

মারণাস্ত্র মনে রেখো ভালোবাসা তোমার আমার।

নয় মাস বন্ধু বলে জেনেছি তোমাকে, কেবল তোমাকে।

বিরোধী নিধন শেষে কতোদিন অকারণে

তাঁবুর ভেতরে ঢুকে দেখেছি তোমাকে বারবার কতোবার।

মনে আছে, আমার জ্বালার বুক

তোমার কঠিন বুকে লাগাতেই গর্জে উঠে তুমি

বিস্ফোরণে প্রকম্পিত করতে আকাশ, আমাদের ভালবাসা

মুহূর্তেই লুফে নিত অত্যাচারী শত্রুর নি:শ্বাস।

মনে পড়ে তোমার কঠিন নলে তন্দ্রাতুর কপালের

মধ্যভাগ রেখে, বুকে রেখে হাত

কেটে গেছে আমাদের জঙ্গলের কতো কালো রাত!

মনে আছে, মনে রেখো

আমাদের সেই সব প্রেম-ইতিহাস।

অথচ তোমাকে আজ সেই আমি কারাগারে

সমর্পণ করে, ফিরে যাচ্ছি ঘরে

মানুষকে ভালোবাসা ভালোবাসি বলে।

যদি কোনোদিন আসে আবার দুর্দিন,

যেদিন ফুরাবে প্রেম অথবা হবে না প্রেম মানুষে মানুষে

ভেঙে সেই কালো কারাগার

আবার প্রণয় হবে মারণাস্ত্র তোমার আমার।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস একটি জাতীয় গর্ব এবং উদযাপনের দিন, যেখানে সকল স্তরের মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগকে সম্মান করতে এবং গণতন্ত্র, স্বাধীনতা এবং মানবাধিকারের নীতির প্রতি তাদের অঙ্গীকার পুনর্নিশ্চিত করতে একত্রিত হয়। এটি অতীতের সংগ্রামকে স্মরণ করার এবং বাংলাদেশের জনগণের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে তাকানোর দিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *