রাজনীতি কিভাবে করতে হয়?

সুপ্রিয় পাঠক বৃন্দ, আশা করি সকলে ভালো আছেন। আরেকটি নতুন অনুচ্ছেদে আপনাদেরকে স্বাগত। আপনারা অনেকেই কিভাবে রাজনীতি করতে হয় তা জানতে চেয়ে অনলাইনে সার্চ করে থাকেন। আমার আজকের এই অনুচ্ছেদে কিভাবে রাজনীতি করতে হয় এ নিয়ে বিস্তারিত দিকনির্দেশনা উপস্থাপন করব। আমার অনুচ্ছেদটি মনোযোগ সহকারে পাঠ করলে আপনি রাজনীতি করার প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা পেয়ে যাবেন বলে আশা করি। পুরো অনুচ্ছেদটি মনোযোগ সহকারী পাঠ করুন।
রাজনীতি কি?
রাজনীতি হল দলীয় বা নির্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে ক্ষমতার সম্পর্কের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ বিষয়ক কর্মকাণ্ডের সমষ্টি, উদাহরণস্বরুপ; সম্পদের বণ্টন হল এমন একটি কর্মকাণ্ড। রাজনীতি এ্যাকাডেমিক অধ্যয়নকে রাজনীতিবিজ্ঞান বা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলে। অর্থাৎ সহজ ভাষায় রাজনীতি বলতে আমরা বুঝবো নির্দিষ্ট একটি দল কিংবা নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তিবর্গের মধ্যে ক্ষমতার বিলি বন্টন এর নীতিমালা। রাজনীতির অনেকগুলো ধারা থাকে। সেই সাথে রাজনীতি করার জন্য ব্যক্তিকে কিছু গুণাবলী অর্জন করতে হয়। আর আজকের অনুচ্ছেদে রাজনীতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করব।
রাজনীতি কত প্রকার ও কি কি?
আপনি একজন রাজনীতিবিদ হতে যাচ্ছেন। অথচ আপনি রাজনীতির সংজ্ঞা রাজনীতির প্রকারভেদ জানেন না এ হতে পারে না। কেননা রাজনীতির ভালো এবং মন্দ উভয় দিক রয়েছে। রাজনীতির ভালো ও মন্দ দিক নিয়ে রাজনীতির প্রকারভেদ হলো প্রধানত দুই প্রকারঃ
- কল্যানের রাজনীতি।
- সন্ত্রাসের রাজনীতি।
কল্যাণের রাজনীতি সচরাচর জনগণের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করে। জনগণের সুবিধা অসুবিধা গুলো নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে। জনগণের জন্য মঙ্গল এরকম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সাহায্য করে। অপরদিকে সন্ত্রাসের রাজনীতি হলো কোন ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে গঠিত দল। সন্ত্রাসী রাজনীতির মাধ্যমে জনগণের স্বার্থ ক্ষুন্ন হয়। এতে করে জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবং জনগণ এই সন্ত্রাসের রাজনীতিকে কখনোই সমর্থন করে না। আপনি যদি রাজনীতিবিদ হবেন বলে মানুষদের করেছেন তবে অবশ্যই আপনাকে কল্যাণের রাজনীতি করার চিন্তাভাবনা করতে হবে। কেননা একমাত্র কল্যাণের রাজনীতিই পারে মানুষকে আকৃষ্ট করতে।
ছাত্র রাজনীতি কাকে বলে?
তিনি জনসংখ্যার মোটা অংশ হলো তরুণ সমাজ। আর এই তো না সমাজের অধিকাংশই ছাত্র সমাজের অন্তর্ভুক্ত। ছাত্র সমাজের মধ্যে যে রাজনীতি প্রচলিত আছে তাকেই বলে ছাত্র রাজনীতি। ছাত্র রাজনীতি মূলত রাজনীতিবিদ তৈরীর মূল পাটাতন। একজন ছাত্র তার ছাত্র জীবন থেকেই যখন রাজনীতির চর্চা করে আসেন তখন তিনি বুঝতে পারেন তার অনুসারীদের চাওয়া কি, তার অনুসারীরা তাকে কতটুকু সমর্থন করছেন কিংবা অনুসারীগণ তার কোন জিনিসটি প্রত্যাখ্যান করছেন। এসব বিষয়ে বিশদ অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়ে গেলে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে সে ব্যক্তি তখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বলাই বাহুল্য; এখনো পর্যন্ত পৃথিবীতে যতগুলো বড় বড় স্বাধীনতা সংগ্রাম সংগঠিত হয়েছে তার সবগুলোই গোড়াপত্তন ঘটেছে ছাত্র রাজনীতি হতে। বাংলাদেশের ইতিহাসের দিকে লক্ষ্য করলে ১৯৫২ ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, এমনকি মহান মুক্তিযুদ্ধের পেছনে ছাত্র রাজনীতির ভূমিকা অনস্বীকার্য।
নেতা হওয়ার জন্য কি কি গুণাবলী থাকতে হয়?
প্রত্যেক মানুষের ই একটি লক্ষ্য থাকে। ভবিষ্যৎ জীবনে কোন ব্যক্তি কিভাবে জীবন অতিবাহিত করতে পারে এ নিয়ে থাকে বিস্তর পরিকল্পনা। এরমধ্যে অনেক ব্যক্তিই আছেন যারা কিনা ভবিষ্যৎ জীবনে নিজেকে রাজনীতিবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পছন্দ করেন। রাজনীতি করার জন্য একজন মানুষের ভেতর নেতা হওয়ার যোগ্যতা থাকতে হবে। এদের নেতা হল এমন এক ব্যক্তি যিনি তার নিজস্ব মতামত তার অনুসারীদের উপর প্রয়োগ করতে পারেন এবং তার মত অনুসারে তার অনুসারীদেরকে চালিয়ে নিতে পারেন। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে এরকম গুণসম্পন্ন ব্যক্তি শতকরা হিসেবে খুবই নগণ্য। তার মানে কি আমরা ধরে নেব, আপনার ভেতরে নেতা হওয়ার কোন যোগ্যতাই নেই? ব্যাপারটা কিন্তু মোটেও তা নয়।
নেতা হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কিছু গুণাবলী থাকা প্রয়োজন। এই গুণাবলী কোন ব্যাক্তি অর্জন করলেই যে কেউ নেতা হওয়ার যোগ্যতা রাখে। তাহলে চলুন জেনে আসা যাক কোন ব্যক্তির নেতা হওয়ার জন্য কি কি যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন।
- সততা: একজন ব্যক্তি নেতা হওয়ার জন্য অবশ্যই তার মধ্যে সততা নামক গুনটি থাকা আবশ্যক। কেননা সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা। রাজনীতি করতে গেলে জনগণের সমর্থন থাকা আবশ্যক। আর জনগণ কখনোই একজন অসৎ নেতাকে সমর্থন করে না।
- অন্যদের উপর বিশ্বাস রাখা: একজন নেতার দ্বিতীয় যে গুণটি থাকা আবশ্যক তা হল তার কর্মীদের ওপর বা অনুসারীদের ওপর বিশ্বাস রাখা। আপনি যার সাথে কাজ করবেন কিংবা যারা আপনার সাথে কাজ করবে তাদের মধ্যে একটা সমঝোতা না থাকলে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে করে নেতা এবং অনুসারীদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে।
- যোগাযোগ দক্ষতা: একজন নেতার ভেতর যোগাযোগ দক্ষতা থাকা বাঞ্ছনীয়। আপনি নেতা হতে চাচ্ছেন অথচ আপনি জনগণের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারছেন না কিংবা পারেন না। তাহলে কখনোই আপনি জনগণকে আপনার প্রতি আকৃষ্ট করতে পারবেন না।
- সহজ হতে পারা: একজন নেতার কাছে অনেক কঠিন কঠিন সমস্যা নিয়ে জনগণ আসবে এটাই স্বাভাবিক। এ সকল সমস্যার সঠিক বিচার বিশ্লেষণ করে সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। নেতা হিসেবে আপনার ভেতর এই গুণটি থাকা অত্যাবশ্যক।
- আত্মবিশ্বাস ও সাহস: নেতা হওয়ার জন্য নিজের উপর প্রচুর আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে এবং নেতাকে যেকোনো পরিস্থিতি সামলে নেয়ার সাহস থাকতে হবে। নেতা যদি ভীতু টাইপের হয় কিংবা নেতার যদি নিজের উপরই বিশ্বাস না থাকে তাহলে সেই নেতা কখনোই তার রাজনৈতিক জীবনে উন্নতি করতে পারবেন না। কেননা সমস্যার সমাধানের পথই একজন নেতাকে জনগণের থেকে ব্যতিক্রমী করে তোলে।
- উদাহরণ সৃষ্টি করা: আপনি যদি একজন ভালো মানের নেতা হতে চান তবে অবশ্যই আপনাকে এমন দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করতে হবে যাতে করে জনগণ এর আগে কখনোই তা প্রত্যক্ষ করেনি। আপনি যদি অন্য কোন নেতাকে দেখে তার মত হতে চান তাহলে বেঁধে যাবে বিপত্তি। আপনাকে হতে হবে আপনার মত এবং আর সবার থেকে ব্যতিক্রমী।
- আশাবাদী হওয়া ও অন্যদের অনুপ্রাণিত করা: একজন নেতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো আশাবাদী হওয়া। অন্যরা যেখানে ব্যর্থ হয়েছে সেখান থেকেই আশার বাণী জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে তাহলেই একজন ভালো মানের নেতা হওয়া সম্ভব।
- সিদ্ধান্ত নেয়ার ও নতুন বিষয় শেখার দক্ষতা: একজন নেতাকে অবশ্যই যেকোনো পরিস্থিতিতে যে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার যোগ্যতা থাকতে হবে। এমনকি যে বিষয়টি আগে কখনো দেখা যায়নি বা ঘটেনি এরকম বিষয়কে পূর্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই করার দক্ষতা থাকতে হবে।
- অন্যদের প্রতি যত্নশীল হওয়া: একজন নেতা মূলত টিকে থাকে তার অনুসারীদের উপর ভিত্তি করে। আপনি একজন নেতা কিন্তু আপনি জনগণের স্বার্থ লক্ষ্য রাখছেন না তাহলে জনগণ আপনাকে প্রত্যাখ্যান করবে। এজন্য একজন নেতাকে অবশ্যই তার অনুসারীদের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। উপরোক্ত গুণাবলী কোন ব্যক্তি ধারণ করতে পারলে তবেই তিনি নেতা হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারবেন। কেননা নেতা হতে গেলে অনুসারীর প্রয়োজন হয়। আর এ সকল গুনাবলি ছাড়া গুটিকয়েক মানুষ ব্যতীত কেউ আপনাকে অনুসরণ করবে না।
উপসংহার: ব্যক্তি কিংবা রাষ্ট্রীয় স্বার্থে রাজনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ দর্শন। রাজনীতির কারণেই পৃথিবীতে তৈরি হয়েছে অশান্তি আবার সেই রাজনীতির কারণেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শান্তি। গুটি কয়েক মানুষ তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের লক্ষ্যে রাজনীতিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। তবে এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, রাজনীতি মূলত জনগণের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যেই প্রতিষ্ঠিত হয় এবং কার্য সম্পাদনা করে। আপনি যদি একজন দক্ষ রাজনীতিবিদ হতে চান তাহলে আপনাকে কি কি গুনাবলী অর্জন করতে হবে এ নিয়ে আমার আজকের অনুচ্ছেদে বিশদ বর্ণনা উপস্থাপন করলাম। আশা করি আমার অনুচ্ছেদ থেকে আপনি উপকৃত হয়েছেন। লেখাটি ভালো লাগলে শেয়ার করে সাথে থাকবেন। অন্যদেরকে জানানোর সুযোগ করে দিবেন। অসংখ্য ধন্যবাদ।