লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের গুরুত্ব ও ফজিলত ও আমল

আজ ২৬ শে রমজান, আজকের রাতে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছিল। তাই এই রাতকে লাইলাতুল কদর বলা হয়। আজকের এই অনুষ্ঠানে আমরা লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব, লাইলাতুল কদরের ফজিলত, এবং লাইলাতুল কদরের কিছু আমল তুলে ধরার চেষ্টা করব। তাই আপনারা যারা লাইলাতুল কদরের এই বিশেষ রাতে এর গুরুত্ব ফজিলত এবং আমল সম্পর্কে জানতে আমার এই অনুচ্ছেদে এসেছেন তাদের সকলকে স্বাগতম। আশা করি আমার এই অনুচ্ছেদটি আপনাদের লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব এবং ফজিলত সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে।
‘লাইলাতুল কদর’ আরবি শব্দ। শবে কদর হলো ‘লাইলাতুল কদর’-এর ফারসি পরিভাষা। ‘শব’ অর্থ রাত আর আরবি ‘লাইলাতুন’ শব্দের অর্থও রাত বা রজনী। কদর অর্থ সম্মানিত, মহিমান্বিত। সুতরাং লাইলাতুল কদরের অর্থ সম্মানিত রজনী বা মহিমান্বিত রজনী।
লাইলাতুল কদর ইসলামিক ধর্মের একটি মহান রাত যা রমজান মাসের 26 দিনের মধ্যে অবস্থান করে। ইসলামী ক্যালেন্ডারে এটি রমজানের ২৭তম রাত হিসাবে চিহ্নিত হয়। এটি অরবি ভাষায় “কদরের রাত” বোঝায়।
ইসলামিক দরবারে লাইলাতুল কদর অত্যন্ত পবিত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসাবে বিবেচিত হয়। এই রাতে মুসলিমরা পরম পরমেশ্বর আল্লাহর কাছে বেশী ইবাদত ও প্রার্থনা করে তাঁর কৃপা ও দয়া অর্জন করতে চেষ্টা করে। এই রাতে কোনো ইবাদত এক সমস্ত শত মাসের পরিমাণ পরিশুদ্ধ হয়।কুরআন করিমে বলা হয়েছে যে, লাইলাতুল কদর হল হায়া তুল কদরের তুল্য। হায়া তুল কদর মাসগুলোর মধ্যে সর্বাধিক মহান রাত হিসাবে বিবেচিত হয়।
লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের গুরুত্ব
লাইলাতুল কদর একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত। আল্লাহ তা’আলা এই রাতে হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর উপর কুরআন নাযিল করেছিল। এই রাতের গুরুত্ব আলোচনা করলে শেষ হবে না। এই রাতে আল্লাহ তাআলার নিকট নফল নামাজ পড়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করলে সেটি অবশ্যই কবুল হয়। এই রাতে নিজের পরিবার এবং দেশ এবং জাতির জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা এবং উন্নতি কামনা করা হয় আল্লাহতালার কাছে। আল্লাহতালার কাছে কোন জিনিস আদায় করে নেওয়ার সবথেকে উত্তম সময় হলো লাইলাতুল কদর।
‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমান সহকারে ও আল্লাহর কাছ থেকে বড় শুভফল লাভের আশায় ইবাদতের জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে, তার পেছনের সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে’ (বুখারি ও মুসলিম)। এ রাতের কল্যাণ থেকে একমাত্র হতভাগ্য লোক ছাড়া আর কেউ বঞ্চিত হয় না (ইবনে মাজাহ ও মিশকাত)।
লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের ফজিলত
‘কিয়ামুল লাইল’ অর্থ হলো রাত্রি জাগরণ। মহান আল্লাহর জন্য আরামের ঘুম স্বেচ্ছায় হারাম করে রাত জেগে ইবাদত করা আল্লাহর প্রিয় বান্দাহদের একটি গুণ। মহান আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাহদের পরিচয় দিয়েছেন এভাবে- ‘তারা রাত্রি যাপন করে রবের উদ্দেশে সিজদাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে থেকে’ (সূরা ফুরকান : ৬৪)।
‘তাদের পার্শ দেশ বিছানা থেকে পৃথক থাকে (অর্থাৎ তারা শয্যা গ্রহণ করে না ; বরং এবাদতে মশগুল থাকে)। তারা গজবের ভয়ে এবং রহমতের আশায় তাদের রবকে ডাকতে থাকে এবং আমি যা দিয়েছি তা থেকে দান করে থাকে। কেউ জানে না। তাদের আমালের পুরস্কারস্বরূপ (আখিরাতে) তাদের জন্য কী জিনিস গোপনে রাখা হয়েছে’ (সূরা সিজদা : ১৬-১৭)।
আল্লাহর প্রিয় বান্দাহরা গোটা জীবনই এভাবে কাটান। আমাদের সে জীবনে প্রবেশ করতে হলে দরকার অধ্যবসায়। পবিত্র রমজান, বিশেষ করে লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধানের প্রচেষ্টা আমাদের ঈপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছতে সাহায্য করবে।
মুসনাদে আহমেদ গ্রন্থে হজরত ওবায়দা ইবনে সামেত বর্ণিত হাসিসে উদ্ধৃত হয়েছে- ’নবী করিম সা: বলেছেন- ‘কদরের রাত রমজান মাসের শেষ দশ রাতে রয়েছে। যে ব্যক্তি এর শুভফল লাভের উদ্দেশ্যে ইবাদতের জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে, আল্লাহ তার আগের ও পেছনের গুনাহ মাফ করে দেবেন।’