স্বাধীনতার সেরা কবিতা

স্বাধীনতা দিবসের সেরা কবিতা। আসসালামু আলাইকুম পাঠক, আপনারা যারা স্বাধীনতা দিবসের সেরা কবিতা অনুসরণ করে আমার এই অনুচ্ছেদে এসেছেন তারা আমার এই স্বাধীনতা দিবসের সব থেকে সেরা কবিতা গুলো সংগ্রহ করে নিতে পারেন। আমি শুধুমাত্র আপনাদের জন্য স্বাধীনতা দিবসের বেশ কয়েকটি সেরা কবিতা সংযুক্ত করেছি । স্বাধীনতা দিবসের সব থেকে সেরা কবিতা গুলো পাওয়ার জন্য আমার এই অনুচ্ছেদটি আপনাকে পুরোটাই পড়তে হবে। চলুন কথা না বাড়িয়ে আমরা এখন দেখে নেব স্বাধীনতা দিবসের সেরা কবিতা কি কি রয়েছে আমাদের এই অনুচ্ছেদে।
ব্যক্তিগত জীবনে কিংবা রাষ্ট্রীয় জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শব্দ। আমরা আজ যে স্বাধীনতা নিয়ে এত বড়াই করি সেই স্বাধীনতা এমনি এমনি আসেনি। বহুত ত্যাগ এবং তিতিক্ষার পর আমরা এই স্বাধীনতা পেয়েছি। কারণ কোন সরকার কোন দেশকে স্বাধীনতা এমনি এমনি প্রদান করেন না। ৩০ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে আমরা আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছি। প্রায় ২ লক্ষ মা বোন স্বাধীনতার জন্য নিজের ইজ্জত বিলিয়ে দিয়েছিল। এই অর্জিত স্বাধীনতাকে আমরা আমাদের জীবন দিয়ে রক্ষা করব। স্বাধীনতা দিবস কিংবা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের স্বাধীনতা দিবস নিয়ে কবিতা আবৃতি অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। আপনি সেই সকল অনুষ্ঠানের পার্টিসিপেট করার জন্য স্বাধীনতা দিবসের সবথেকে সেরা কবিতাগুলো আপনার সংগ্রহশালায় রেখে দিতে পারেন। সেজন্য আজকের এই অনুচ্ছেদে আমরা স্বাধীনতা দিবসের সব থেকে সেরা কবিতা গুলো আপনাদের জন্য শেয়ার করেছি।
স্বাধীনতা দিবসের কবিতা
“স্বাধীনতা তুমি” কবি শামসুর রহমানের বিখ্যাত কবিতা। এরকম আরো অনেক বিখ্যাত কবিতা লিখে গেছেন বিখ্যাত বিখ্যাত কবি সাহিত্যিকগণ। আমরা এই অনুচ্ছেদের স্বাধীনতা দিবস নিয়ে আরো কিছু বিখ্যাত কবিতা আপনাদের জন্য শেয়ার করলাম।
একটি পতাকা পেলে
– হেলাল হাফিজ
কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
আমি আর লিখবো না বেদনার অঙ্কুরিত কষ্টের কবিতা
কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
ভজন গায়িকা সেই সন্ন্যাসিনী সবিতা মিস্ট্রেস
ব্যর্থ চল্লিশে বসে বলবেন,–’পেয়েছি, পেয়েছি’।
কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
পাতা কুড়োনির মেয়ে শীতের সকালে
ওম নেবে জাতীয় সংগীত শুনে পাতার মর্মরে।
কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
ভূমিহীন মনুমিয়া গাইবে তৃপ্তির গান জ্যৈষ্ঠে-বোশেখে,
বাঁচবে যুদ্ধের শিশু সসন্মানে সাদা দুতে-ভাতে।
কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
আমাদের সব দুঃখ জমা দেবো যৌথ-খামারে,
সম্মিলিত বৈজ্ঞানিক চাষাবাদে সমান সুখের ভাগ
সকলেই নিয়ে যাবো নিজের সংসারে।

স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো
– নির্মলেন্দু গুণ
একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়ে
লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে
ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে: ‘কখন আসবে কবি?’
এই শিশু পার্ক সেদিন ছিল না,
এই বৃক্ষে ফুলে শোভিত উদ্যান সেদিন ছিল না,
এই তন্দ্রাচ্ছন্ন বিবর্ণ বিকেল সেদিন ছিল না৷
তা হলে কেমন ছিল সেদিনের সেই বিকেল বেলাটি?
তা হলে কেমন ছিল শিশু পার্কে, বেঞ্চে, বৃক্ষে, ফুলের বাগানে
ঢেকে দেয়া এই ঢাকার হদৃয় মাঠখানি?
জানি, সেদিনের সব স্মৃতি ,মুছে দিতে হয়েছে উদ্যত
কালো হাত৷ তাই দেখি কবিহীন এই বিমুখ প্রান্তরে আজ
কবির বিরুদ্ধে কবি,
মাঠের বিরুদ্ধে মাঠ,
বিকেলের বিরুদ্ধে বিকেল,
উদ্যানের বিরুদ্ধে উদ্যান,
মার্চের বিরুদ্ধে মার্চ … ৷
হে অনাগত শিশু, হে আগামী দিনের কবি,
শিশু পার্কের রঙিন দোলনায় দোল খেতে খেতে তুমি
একদিন সব জানতে পারবে; আমি তোমাদের কথা ভেবে
লিখে রেখে যাচ্ছি সেই শ্রেষ্ঠ বিকেলের গল্প৷
সেই উদ্যানের রূপ ছিল ভিন্নতর৷
না পার্ক না ফুলের বাগান, — এসবের কিছুই ছিল না,
শুধু একখন্ড অখন্ড আকাশ যেরকম, সেরকম দিগন্ত প্লাবিত
ধু ধু মাঠ ছিল দূর্বাদলে ঢাকা, সবুজে সবুজময়৷
আমাদের স্বাধীনতা প্রিয় প্রাণের সবুজ এসে মিশেছিল
এই ধু ধু মাঠের সবুজে৷
কপালে কব্জিতে লালসালু বেঁধে
এই মাঠে ছুটে এসেছিল কারখানা থেকে লোহার শ্রমিক,
লাঙল জোয়াল কাঁধে এসেছিল ঝাঁক বেঁধে উলঙ্গ কৃষক,
পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে এসেছিল প্রদীপ্ত যুবক৷
হাতের মুঠোয় মৃত্যু, চোখে স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল মধ্যবিত্ত,
নিম্ন মধ্যবিত্ত, করুণ কেরানী, নারী, বৃদ্ধ, বেশ্যা, ভবঘুরে
আর তোমাদের মত শিশু পাতা-কুড়ানীরা দল বেঁধে৷
একটি কবিতা পড়া হবে, তার জন্যে কী ব্যাকুল
প্রতীক্ষা মানুষের: “কখন আসবে কবি?’ “কখন আসবে কবি?’
শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে,
রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে
অত:পর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন৷
তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল,
হদৃয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার
সকল দুয়ার খোলা৷ কে রোধে তাঁহার বজ্রকন্ঠ বাণী?
গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতাখানি:
‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম৷’
সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের৷
স্বাধীনতা তুমি
– শামসুর রাহমান
স্বাধীনতা তুমি
রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।
স্বাধীনতা তুমি
কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো
মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা-
স্বাধীনতা তুমি
শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা
স্বাধীনতা তুমি
পতাকা-শোভিত শ্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল।
স্বাধীনতা তুমি
ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি।
স্বাধীনতা তুমি
রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার।
স্বাধীনতা তুমি
মজুর যুবার রোদে ঝলসিত দক্ষ বাহুর গ্রন্থিল পেশী।
স্বাধীনতা তুমি
অন্ধকারের খাঁ খাঁ সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক।
স্বাধীনতা তুমি
বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর
শানিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ।
স্বাধীনতা তুমি
চা-খানায় আর মাঠে-ময়দানে ঝোড়ো সংলাপ।
স্বাধীনতা তুমি
কালবোশেখীর দিগন্তজোড়া মত্ত ঝাপটা।
স্বাধীনতা তুমি
শ্রাবণে অকূল মেঘনার বুক
স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন।
স্বাধীনতা তুমি
উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির কাঁপন।
স্বাধীনতা তুমি
বোনের হাতের নম্র পাতায় মেহেদীর রঙ।
স্বাধীনতা তুমি বন্ধুর হাতে তারার মতন জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোস্টার।
স্বাধীনতা তুমি
গৃহিণীর ঘন খোলা কালো চুল,
হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো উদ্দাম।
স্বাধীনতা তুমি
খোকার গায়ের রঙিন কোর্তা,
খুকীর অমন তুলতুলে গালে
রৌদ্রের খেলা।
স্বাধীনতা তুমি
বাগানের ঘর, কোকিলের গান,
বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা,
যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।
ছোটদের স্বাধীনতা দিবসের কবিতা
বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানের পার্টিসিপেট করার জন্য ছোটদের স্বাধীনতা দিবসের কবিতা এই অনুচ্ছেদে সংযুক্ত করা হল। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশি ব্যাপক হারে স্বাধীনতা দিবস নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সে সকল অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ থাকবে স্বাধীনতা দিবস নিয়ে চিত্রাংকন এবং স্বাধীনতা দিবস নিয়ে কবিতা প্রতিযোগিতা। স্বাধীনতা দিবস নিয়ে আমরা ছোটদের জন্য কিছু কবিতা অনুচ্ছেদের এই অংশের সংযুক্ত করব।
অসীম ভালোবাসা
—————-শরিফ আহমাদ
স্বপ্ন আঁকা সোনার হরিণ
ছিলো সবার বুকে
মুক্ত আকাশ মাটি-মানুষ
থাকবে দারুণ সুখে ৷
কিন্তু হঠাৎ দেশ সীমানায়
রক্তচোষার ভিড়ে
অশান্তির এক বাতাস নামে
শহর-গ্রামের নীড়ে ৷
জাগলো সবাই সাহস নিয়ে
রক্ত লালে লালে
স্বপ্ন পূরণ দিন এলো ফের
ফুটফুটে সকালে ৷
নতুন দিনের সূর্য ওঠে
বাড়ে স্বপ্ন-আশা
দেশ স্বাধীনের প্রতি সবার
অসীম ভালোবাসা ৷
একাত্তরের বর্গী
শরিফ আহমাদ
একাত্তরে বর্গী এলো
হঠাৎ করে রাতে
অস্ত্র নিয়ে হাতে,
হামলা চালায় শহর এবং গ্রামে
যখন আঁধার নামে ।
ছুড়তে থাকে কামান রকেট
করতে থাকে গুলি
উড়ায় মাথার খুলি,
দেয় গুড়িয়ে কাচা পাকা বাড়ি
মারে পুরুষ-নারী ।
বর্গীগুলোর হত্যা ধর্ষণ
সহ্য হয় না কারো
ছোট্ট ছেলে তারও,
গর্জে ওঠে কিশোর-যুবক মিলে
স্বদেশ রেখে দিলে ।
হামলা চালায় গড়ে নিয়ে
প্রতিরোধের দেয়াল
সবাই রাখে খেয়াল,
শেষ অবধি বর্গী হেরে গেলো
স্বাধীনতা এলো ।
স্বাধীনতা দিবসের ছোট কবিতা
স্বাধীনতা দিবসকে আরো বেশি করে রাঙিয়ে তোলার জন্য বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চল শহর বন্দরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সে সকল অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ থাকে কবিতা আবৃত্তি। যেহেতু অনুষ্ঠানটি স্বাধীনতা দিবস ঘেরে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে তাই স্বাধীনতা দিবসের ছোট ছোট কবিতা গুলো এই সকল অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করা যেতে পারে। আপনাদের জন্য অনুচ্ছেদের এই অংশে স্বাধীনতা দিবসের কিছু ছোট কবিতা শেয়ার করব।
স্বাধীনতা তুমি এসেছিলে অন্ধকারকে দূর করে,
স্বাধীনতা তুমি এসেছিলে আমার ভাইয়ের রক্তের বিনিময়ে,
স্বাধীনতা তুমি শিখিয়েছে প্রতিটি মানুষকে এক হতে,
স্বাধীনতা তুমি আমার অহংকার।
স্বাধীনতা বাংলাদেশকে আলোকিত করতে এসেছিল,
স্বাধীনতা বাংলার মানুষকে অধিকার আদায় করতে শিখেছিল।
স্বাধীনতা সেতো প্রতিটি মানুষের চাওয়া ,
স্বাধীনতা সে তো প্রতিটি মানুষের অহংকার।
তুমি আমার দেশ,
তুমি আমার অহংকার,
তোমায় কি ভুলিতে পারি,
আমার প্রিয় জন্মভূমি।
সম্মানিত পাঠক, বহুত ত ্যাগ সংগ্রাম জীবনের বিনিময়ে আমরা আমাদের এই স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আমরা একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি। আমাদের বাঙালি জাতির এক সকল রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতাকে আমরা আমাদের জীবন দিয়ে রক্ষা করব। শত ষড়যন্ত্র এবং দেশ বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে গিয়ে প্রিয় মাতৃভূমি দেশের জন্য কাজ করে যাব এই কামনায় আজকের এই অনুচ্ছেটি এখানেই শেষ করছি। পুরো অনুচ্ছেদটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।