পুলিশ ক্লিয়ারেন্স

সম্মানিত সুধী, আশা করি সকলে ভালো আছেন। আপনার অনেকে আছেন যারা কিভাবে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পাওয়া যেতে পারে জানতে চেয়ে অনলাইনে সার্চ করে থাকেন। আপনাদের জন্যই নিয়ে এলাম আজকে নতুন একটি অনুচ্ছেদ। আমার আজকের অনুচ্ছেদের বিষয় কিভাবে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পাওয়া যাবে। আশা করি আমার অনুচ্ছেদ পাঠ করে আপনারা আপনার কাঙ্খিত বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারবেন।
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স
বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে কোন ব্যক্তির নাগরিকত্বের বৈধতা এবং দেশদ্রোহী কোন কাজে যুক্ত না থাকার যে সার্টিফিকেট পুলিশ কর্তৃক প্রদান করা হয় তাকেই পুলিশ ক্লিয়ারেন্স বলা হয়। বিভিন্ন কাজের জন্যই পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের প্রয়োজন পড়ে। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য কি কি কাগজপত্র দরকার, কি কি যোগ্যতা থাকা দরকার এবং কিভাবে পুলিশ ক্লিয়ার এর সার্টিফিকেট পাওয়ার আবেদন করতে হবে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আজকে বিস্তারিত আলোচনা করব। সাথেই থাকুন।
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পেতে কোথায় যোগাযোগ করতে হয়? পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য আপনাকে কিছু যোগ্যতা অর্জন করে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। অনলাইনে আবেদন সম্পন্ন হলে আবেদনপত্র দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী আপনাকে নির্দিষ্ট ঠিকানায় গিয়ে আবেদন পত্র জমা দিতে হবে।
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট মেয়াদ কত দিন?
অনেক কষ্টের পর পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট হাতে পেলে অনেক সময় কিছু দিনের মধ্যে এর মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তখন নতুন করে আবার আবেদন করার ঝামেলা পোহাতে হয়। এজন্য অনেকেই জিজ্ঞাসা করেন যে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট এর মেয়াদ কতদিন থাকে। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট হাতে পাওয়ার ৩ মাস অর্থাৎ ৯০ দিন পর্যন্ত এটার মেয়াদ বহাল থাকে। মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলে পুনরায় ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করতে হয়।
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ডেলিভারি সময়
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট আবেদন করার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন দিতে পাঁচ দিনের মতো সময় লাগে। সেই সাথে আবেদনকারীর হাতে আসতে সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১০ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে ডেলিভারি কিছুটা বিলম্বিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পাওয়ার যোগ্যতা
অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি কাগজ পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট। এই সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য আবেদনকারীর যে সকল শর্তাবলী পূরণ করতে হবে তা হলো- আবেদনকারীকে কমপক্ষে তিন মাস মেয়াদ সম্পন্ন পাসপোর্ট থাকতে হবে। আবেদনকারীর বর্তমান ঠিকানা হিসেবে পাসপোর্টে উল্লেখিত স্থায়ী কিংবা জরুরি ঠিকানার যে কোন একটি ব্যবহার করতে হবে তবে অবশ্যই আবেদনকারীকে ওই ঠিকানায় বসবাস করতে হবে। মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট এমআরপি এর ক্ষেত্রে যদি পাসপোর্ট এর ঠিকানা উল্লেখ না থাকে সে ক্ষেত্রে ঠিকানা প্রমাণস্বরূপ জাতীয় পরিচয় পত্র বা জন্ম নিবন্ধন সনদ ইত্যাদি সরকারি গেজেটেড কর্মকর্তা দ্বারা সত্যায়িত করে দাখিল করতে হবে। আবেদনকারী যদি বিদেশে অবস্থানকারী হয় সে ক্ষেত্রে ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য তিনি যে দেশে অবস্থান করছেন সেই দেশের দূতাবাস বা হাইকমিশন কর্তৃক পাসপোর্ট এর তথ্য বা তার সত্যায়িত কপি তার পক্ষে করা আবেদনের সাথে দাখিল করতে হবে। আবেদনকারী যদি বিদেশগামী হয় কিংবা প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিক হয় এবং বাংলাদেশে বসবাস করে বিদেশে প্রত্যাবর্তনকারী বিদেশী নাগরিকদের জন্য প্রয়োজনীয় পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য অনলাইন সিস্টেম এর মাধ্যমে ইস্যু করা হয়। বিদেশগামী কিংবা প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিক যারা বাংলাদেশ ব্যতীত অন্য দেশ থেকে পাসপোর্ট ইস্যু করিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নেয়ার জন্য সর্বশেষ অ্যারইভাল সিল সম্বলিত পৃষ্ঠাটির স্ক্যান কপি আবেদনের সাথে আপলোড করতে হবে। প্রবাসী আবেদন কারিগর যার মাধ্যমে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ সংগ্রহ করতে চান তার নাম ও জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর উল্লেখ করে সত্যায়নপূর্বক একটি অনুমতি পত্র আপলোড করতে হবে। তবে স্থানীয় আবেদনকারীর ক্ষেত্রেও সনদ গ্রহণের সময় অনুরূপ অনুমতি পত্রসহ প্রেরণ করতে হবে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চাকরি কিংবা অন্য কোন কাজে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স প্রয়োজন হলে যে কোন জেলার বাসিন্দা উক্ত জেলা ডিএসবি অফিস অথবা আপনার ঠিকানা যদি মেট্রোপলিটন এলাকায় হয় তাহলে মেট্রোপলিটন এলাকার সিটিএসবি অফিসে যোগাযোগ করতে হবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
আবেদনপত্র জমা দেয়ার জন্য যে সকল ডকুমেন্টস সাথে নিতে হবে-
১। অনলাইনে যথাযথভাবে পূরণকৃত আবেদন পত্র
২। ১ম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা দ্বারা সত্যায়িত পাসপোর্টের তথ্য পাতার স্ক্যানকপি
অথবা
বিদেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশী নাগরিকগনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক সত্যায়িত পাসপোর্টের তথ্য পাতার স্ক্যানকপি
অথবা
৩। বাংলাদেশ ব্যাংক/ সোনালী ব্যাংকের যে কোন শাখা থেকে (১-৭৩০১-০০০১-২৬৮১) কোডে করা ৫০০/- (পাঁচশত) টাকা মূল্যমানের ট্রেজারী চালান অথবা অনলাইনে ক্রেডিট/ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নির্ধারিত সার্ভিসচার্জ সহ ফি প্রদান।
বিদেশী নাগরিকদের ক্ষেত্রে নিজ দেশের জাস্টিস অব পিস (Justice of Peace) কর্তৃক সত্যায়িত পাসপোর্টের তথ্য পাতার স্ক্যানকপি।
আবেদনের নিয়মাবলী
ধাপ : ১
অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করে যে কেউ নিজের জন্য অথবা অন্যের পক্ষে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট এর জন্য আবেদন করতে পারবে। নিবন্ধন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
ধাপ : ২
নিবন্ধিত ব্যবহারকারী অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট সাইটে লগ-ইন করার পর Apply মেনুতে ক্লিক করে আবেদনপত্রটি যথাযথভাবে পূরণ করুন।।
ধাপ : ৩
আবেদন ফরমের প্রথম ধাপে ব্যক্তিগত বিস্তারিত তথ্য, দ্বিতীয় ধাপে বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা পূরণ করুন। আপনার বর্তমান ঠিকানা যে জেলা বা মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত সেই ঠিকানায় পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হবে।
ধাপ : ৪
আবেদন ফরমের তৃতীয় ধাপে প্রয়োজনীয় ডকুমেণ্টসমূহের স্ক্যান কপি আপলোড করুন।
ধাপ : ৫
আবেদন ফরমের চতুর্থ ধাপে আপনার এন্ট্রিকৃত সকল তথ্য দেখানো হবে। আবেদনে কোন ভুল থাকলে তা পূর্ববর্তী ধাপসমূহে ফেরত গিয়ে পরিবর্তন করা যাবে। তবে চতুর্থ ধাপে আবেদনটি সাবমিট করার পর আর কোন পরিবর্তন করার সুযোগ থাকবে না।
ধাপ : ৬
চালানের মাধ্যেমে ফি পরিশোধের উপায় এবং পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে প্রদত্ত নির্দেশনা অনুসরণ করুন।
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স রিজেক্ট হলে করণীয়
কোন কারণেই পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট এর আবেদন রিজেক্ট হয়ে গেলে মনে রাখতে হবে আপনার প্রদত্ত তথ্য বা কাগজপত্রে কোন ভুল রয়েছে। আপনার কাগজপত্র সঠিকভাবে যাচাই করে পুনরায় আবেদন করতে হবে।
বিভিন্ন কাজে অনেক সময় পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের প্রয়োজন পড়ে। এ পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য কোথায় যোগাযোগ করতে হয়, কিভাবে আবেদন করতে হয়, কত দিনের মধ্যে পাওয়া যায় ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরলাম। আশা করি আমার আজকের অনুচ্ছেদ থেকে আপনারা উপকৃত হয়েছেন। লেখাটি ভালো লাগলে শেয়ার করে সাথে থাকবেন।